ঢাকা ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফারাক্কার প্রভাব

পদ্মার নাব্য সংকটে হুমকির মুখে উত্তরাঞ্চলের কৃষি ও জীববৈচিত্র্য 

পদ্মার নাব্য সংকটে হুমকির মুখে উত্তরাঞ্চলের কৃষি ও জীববৈচিত্র্য 

পাবনায় পদ্মা নদীর তলদেশে পলি ও বালি জমে নদী ভরাট হয়ে গেছে, যার ফলে চর জেগে উঠেছে। একই সাথে পদ্মার সঙ্গে যুক্ত ৪৫টি নদ-নদী প্রায় পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে পানি নিয়ন্ত্রণের কারণে পদ্মা নদীর প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলের কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও নৌ-যোগাযোগ হুমকির মুখে পড়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা নদীর কিছু স্থানে পায়ে হেঁটে এবং মেঠো পথে ঘোড়ার গাড়িতে নদী পারাপার চলছে। নদীর পাড়ে গাঙচিল, বেলেহাঁস এবং ধবল বক আর দেখা যায় না, অন্য পাখিরাও চলে গেছে। পানি না থাকার কারণে পদ্মায় মাছের সংখ্যা প্রায় শুন্য হয়ে পড়েছে। জিকে প্রজেক্ট কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। পাবনার পাকশী হার্ডিং ব্রিজ পয়েন্টে নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে নদীর শাখা নদী বড়াল, গড়াই ও আত্রাই নদীও পানিশুন্য হয়ে পড়েছে।

পদ্মা নদী, মধুমতি, নবগঙ্গা, কাজলা, আত্রাই, চিকনাই, কুমারসহ প্রায় ৪৫টি শাখা নদীর বুকে ছোট-বড় অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। বর্তমানে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ ব্রীজের নিচে খাস জমিতে বালু স্থায়ী মৃত্তিকায় রূপ নিয়ে কৃষকরা এখানে চিনা বাদাম, টমেটো, আখসহ নানা রকম শস্য আবাদ করেছেন।

পদ্মার পানি দিয়ে এই অঞ্চলের কৃষকদের সেচ কাজে সহায়তা করা হয়, তবে পানি সঙ্কটের কারণে এই সেচ ব্যবস্থা এখন ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সুত্র জানায়, শুধুমাত্র ফারাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প-কারখানা সবকিছুতে মারাত্মক ক্ষতি করেছে। মিঠাপানি ছাড়া কৃষি তথা কোন ধরনের শিল্প-কারখানা চলতে পারে না। ফারাক্কার কারনে পানির প্রবাহ কমে গেছে। পদ্মার তলদেশ ওপরে উঠে এসেছে। শুস্ক মওসুমে এখন পদ্মায় তেমন ইলিশ পাওয়া যায় না। মাছ আসার জন্য নদীতে যে পরিমান পানি প্রবাহ থাকার কথা সেটি না থাকায় এখন আর পদ্মায় ইলিশ আসে না। পদ্মা নদীতে পানি স্বল্পতার কারণে উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ অবস্থা স্থায়ী রুপ নিতে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য হুমকীর মুখে পড়েছে।

পাবনার মধ্য দিয়ে পদ্মার আর একটি শাখা নদী মরা পদ্মা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে মূল পদ্মা, গড়াই এবং জেলার চাটমোহরের বড়াল, ছোট যমুনা, পূনভবা, আত্রাই, ইছামতি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব নদীর অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা নদীতে পানির প্রবল টান পড়ায় এই সব নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন স্থানে হাটু পর্যন্ত পানি আছে। ৎ

এলাকার প্রবীণরা জানান, ফারাক্কা ব্যারেজের আগে এই সব নদ-নদীতে সারা বছর পানি থাকতো। অপর দিকে তিস্তা নদীতে পানি না থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে পানির টান পড়ায় যমুনা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। কাজিরহাট-আরিচা-বাঘাবাড়ি নৌপথে যমুনার বুক জুড়ে অসংখ্য চর পড়েছে। যমুনা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় জ্বালানী তেল ও অন্যান্য পণ্যবাহী কার্গোজাহাজ অর্ধেক লোড নিয়ে বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী ও নদী বিশেষজ্ঞ কামরুন নেছা জানান, পদ্মার যে বিপুল আয়তন তাতে স্বাভাবিক প্রবাহ থাকলে প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হত না। কিন্তু ভারত নেপালের কোশি থেকে শুরু করে ফারাক্কা পর্যন্ত সুদীর্ঘ পথে পানি প্রত্যাহারের যে একতফা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে- তাতে বাংলাদেশের বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে।

তিনি আরো জানান, উজানে ভারতের নদী কেন্দ্রিক পরিকল্পনার কারণে পলি পড়ে পদ্মা নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর এর প্রভাবে পদ্মার সাথে সংযুক্ত প্রায় ৪৫টি নদী পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। পানির এই সঙ্কট কাটাতে নদীগুলো খননের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ ও গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ জরুরী।

পদ্মা নদী,সংকট,জীববৈচিত্র্য
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত